বিদেশ থেকে টাকা আনার নিয়ম | কিভাবে বিদেশ থেকে ডলার আনবেন? - money from abroad

বাংলাদেশ এখন ফ্রীল্যান্সিং খাতে অনেক এগিয়ে আছে। তাই ফ্রীল্যান্সারদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই আমাদের আজকের এই পোস্ট। নতুন ফ্রীল্যান্সারদের এই বিষয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।কারণ অনেকেই ফ্রীল্যান্সিং এর টাকা দেশে আনার নিয়ম জানেনা। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার পদ্ধতিটা মোটেও জটিল কিছু নয়। তবে যেহেতু এইটা ইন্টারন্যাশনাল লেনদেন তাই এইক্ষেত্রে অনেকেই একটু-আধটু ভয়ে থাকে আর ভয়ে না থাকাটাই অস্বাভাবিক! ফ্রীল্যান্সিং খাতে প্রায় লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে তাই এইক্ষেত্রে বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট হয়ে আসার সময় একেক মাধ্যমে একেক রেট পাওয়া যায়। তাই এইটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে কোনটা সবচেয়ে ভালো রেট দেয় এবং সাথে টাকার নিশ্চয়তা। তো আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে বিদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা দেশে আনবেন । যেহেতু আমি “বৈধভাবে” বলেই দিয়েছি তাই আমি যে মাধ্যমগুলো নিয়ে কথা বলবো সেগুলো শতভাগ নিরাপদ। তো শুরু করা যাক বিদেশ থেকে টাকা আনার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

 

বিদেশ থেকে টাকা আনার নিয়ম - কিভাবে বিদেশ থেকে ডলার আনবেন - money from abroad - NeotericIT.com

বিদেশ থেকে আপনার টাকাটা দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে আসবে যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। প্রকৃতঅর্থে বাংলাদেশ এই-যে নিম্নআয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, এই অভুতপুর্ব উন্নয়নের পেছনের কারিগর আমাদের দেশের প্রবাসীরা আর ফ্রীল্যান্সাররা। যাদের রেমিট্যান্সের টাকায় সচল আছে অর্থনীতির চাকা। বিদেশ থেকে দেশে টাকা আনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে নতুন ফ্রীল্যান্সাররা দ্বিধাদ্বন্ধে থাকেন। তো আজ আশা করছি আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টেই পেয়ে যাবেন।

বিদেশ থেকে টাকা আনার নিয়ম:

আপনি যখন অন্যদেশ থেকে টাকা আনতে যাবেন, তখন আপনার সামনে অনেকগুলো পথ খোলা থাকবে। এসবের মধ্য থেকে আপনাকেই বেছে নিতে হবে কোনটা আপনার জন্য নিরাপদ, লাভজনক এবং অবশ্যই বৈধ। কারণ অবৈধ পথে আপনার টাকার কোনো নিশ্চয়তা বা জবাবদিহিতা কিছুই থাকবে নাহ। তাই আপনাকে সবসময় বৈধ পথেই আপনার কষ্টার্জিত টাকা আনতে হবে। এবার চলুন জেনে নিই কোন কোন পদ্ধতিতে আপনি দেশে টাকা আনতে পারেন।

বিদেশ থেকে টাকা আনার সেরা পদ্ধতিগুলো কি কি?

বিদেশ থেকে টাকা আনার সেরা কয়েকটি মাধ্যম গুলো হলো:

  • বিদেশ থেকে ব্যাংক
  • বিদেশ থেকে বিকাশ
  • বিদেশ থেকে নগদ
  • WISE
  • Payoneer
  • TapTap Send
  • SKRILL
  • Remitly
  • Western Union
  • Xoom

এগুলো হলো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। এগুলোর মধ্য থেকে আপনি যেকোনো পদ্ধতি ব্যাবহার করে নিশ্চিন্তে আপনার টাকা আনতে পারবেন।

এবার চলুন এইসব জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

বিদেশ থেকে ব্যাংকে টাকা আনার নিয়ম:

 আপনি যদি বিদেশ থেকে আপনার ফ্রীল্যান্সিং এর টাকা ব্যাংকে আনতে চান তবে আপনাকে যেকোনা একটা মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এর সহায়তা নিতে হবে। কারণ আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে সরাসরি ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবে না। তাই এক্ষেত্রে আপনাকে International Money Organization গুলোর সার্ভিস নিতে হবে। বিদেশ থেকে বিকাশ বা বিকাশ থেকে নগদে টাকা আনার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে টাকা গ্রহণ করতে হবে।


বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম:

অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত বিদেশি ব্যাংক, মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনা যাবে বিকাশ ব্যবহার করে। Payoneer, WISE এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয়।


Wise এর মাধ্যমে টাকা আনার নিয়ম:

WISE হলো যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার অন্যতম জনপ্রিয় সার্ভিস। যারা ফ্রীল্যান্সিং সেক্টরে বহুদিন ধরে আছেন তাদের কাছে WISE ভালোভাবেই পরিচিত। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ২০ মিলিয়নের অধিক গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে কম রেটে যেকোনো লোকাল ব্যাংক থেকে WISE ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করা যায়।

Payoneer এর মাধ্যমে টাকা আনার নিয়ম:

বিশেষ করে ফ্রীল্যান্সারদের কথা চিন্তা করে বিকাশ ও Payoneer চুক্তির মাধ্যমে বিকাশে যুক্ত হলো পেওনিয়ার থেকে টাকা আনার ফিচার। বিকাশ রেমিট্যান্স অপশনের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট বিকাশ একাউন্টের সাথে লিংক করে পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনা যাবে।

এখন একটু করে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনা যায়?

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম:

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিকাশ একাউন্ট ও একটি পেওনিয়ার একাউন্ট থাকা প্রয়োজন। আপনার আগে থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট না থাকলে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. প্রথমেই বিকাশ এ্যাপ এর Remittance > Payoneer > Create Payoneer Account with bKash অপশনে প্রবেশ করুন
  2. তারপর প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করে রেজিস্টেশন সম্পন্ন করুন

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে খোলা একাউন্ট একটিভ হতে সময় লাগবে অন্তত ৩ কার্যদিবস। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে পেওনিয়ার টিম আপনার তথ্য যাচাই করে একাউন্টের রেজিস্ট্রেশন কনফার্ম করবে।একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়ে গেলে পেওনিয়ার ও বিকাশ একাউন্ট লিংক করতে হবে। পেওনিয়ার এর সাথে বিকাশ অ্যাকাউন্ট লিংক করতে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করুন ও Remittance আইকনে ট্যাপ করে Payoneer সিলেক্ট করুন
  2. তারপর “Link my Payoneer Account” সিলেক্ট করুন
  3. প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সঠিকভাবে প্রদান করুন
  4. একাউন্ট লিংক করার সময়ে মোবাইলে আসা ওটিপি কোড প্রদান করুন।

অবশ্যই পেওনিয়ার একাউন্টে রেজিস্টার্ড নাম ও বিকাশ একাউন্টের নাম একই হতে হবে। একাউন্ট লিংক করার পর বিকাশে পেওনিয়ার এর মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি আনতে পারবেন।

বিকাশের মাধ্যমে পেওনিয়ার থেকে টাকা আনার নিয়ম:

  1. বিকাশ অ্যাপের Remittance এ ক্লিক করে কোন ফরেন কারেন্সি বিকাশে যুক্ত করতে চান তা সিলেক্ট করুন
  2. এরপর টাকার পরিমাণ লিখুন এবং “proceed” অপশনে ক্লিক করুন
  3. তারপর বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করা এমাউন্ট দেখতে পাবেন। টাকায় কনভার্ট করতে “Tap to continue” অপশনে ক্লিক করুন
  4. এরপর Withdrawal Request গ্রহণ করা হলে নোটিফিকেশন আসবে।

TapTap Send এর মাধ্যমে দেশে টাকা আনার নিয়ম:

আমেরিকার ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি কর্তৃক অনুমোদিত মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি খুবই বিশ্বাসযোগ্য, তাই এতে অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে কোন প্রশ্নই আসেনা। বাংলাদেশে এদের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালে। টাকা টান্সফারের জন্য ট্যাপ করলে মুহুর্তের মধ্যে তা পৌছে যায় প্রাপকের কাছে। এছাড়া সেরা মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই TapTap Send গ্রাহকদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।এই অ্যাপ এ টাকা লেনদেন এতোই সহজ যে আলাদা করে আলোচনা করার কোনো কারণ নেই। আপনি অ্যাপটা ইন্সটল করলেই খুব সহজেই বুঝে যাবেন সবকিছু।

SKRILL এর মাধ্যমে দেশে টাকা আনার নিয়ম:

অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে SKRILL এর অপশন আছে। বাংলাদেশের মত বিশ্বের যেসব দেশে PayPal নেই থাকা সেসব দেশগুলোর জন্য রীতিমত আশির্বাদ বলা যায়। প্রবাসীরাও এই সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারেন দেশে তাদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে। আপনার টাকা আপনার হাতে টাকা পৌঁছানোর নিশ্চয়তা এবং কম চার্জে লেনদেন করার সুবিধা রয়েছে SKRILL এ। একটি স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে টাকা আনা যায়। এই মাধ্যমটি ব্যবহার করার জন্য আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিলেই বাকিটা একেবারেই সহজ।

Remitly এর মাধ্যমে দেশে টাকা আনার নিয়ম:

কম খরচে দেশে ডলার আনার ক্ষেত্রে Remitly একটি সেরা পদ্ধতি। মাত্র  ২.৯৯ ডলার সার্ভিস চার্জে টাকা লেনদেন এর সুবিধা দেয় রেমিটলি। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশি টাকায় রুপান্তর হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা রেট পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে Remitly কে অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রিতে রেমিটলি অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা প্রাপকের নাম ও ঠিকানার সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করলেই মানি ট্রান্সফার সম্পন্ন হয়ে যাবে। এই ট্রান্সফারের আপডেট আবার পৌছে যাবে প্রদানকারীর মোবাইল ও ইমেইলে।

Western Union এর মাধ্যমে দেশে টাকা আনার নিয়ম:

Western Union ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পুরনো এবং নির্ভরযোগ্য একটি মাধ্যম। যে ঠিকানায় টাকা দেওয়া হচ্ছে তার যথাযথ তথ্য প্রদান করতে হয়। টাকা প্রদানের জন্য এজেন্ট-এর কাছে গিয়ে অথবা ব্যবহারকারি নিজেই ডলার টাকায় রূপান্তর করে দেশে তার পরিজনদের নিকট পাঠাতে পারেন বা ফ্রীল্যান্সিং এর টাকা আনতে পারেন।

Xoom এর মাধ্যমে দেশে টাকা আনার পদ্ধতি:

Paypal এর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে XOOM চালু আছে। আর পেপালের পরিবর্তে জুম বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে ফ্রীল্যান্সারদের পেপালের অভাবে অনেক অসুবিধায় পড়তে হতো কারণ প্রথমদিকে পেপাল ছাড়া অন্য কোনো পেমেন্ট গেটওয়ে ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে ছিলো নাহ। আপনি খুব সহজে XOOM এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ করে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করতে পারেন। 

তো এই ছিলো বিদেশ থেকে টাকা আনার বা ডলার আনার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত। আপনি উপরে উল্লেখ করা পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে আপনার সুবিধামতো মাধ্যম অনুসরণ করে আপনার ফ্রীল্যন্সিং এর টাকা দেশে আনতে পারবেন সহজেই।

আপনার অন্যকোনো প্রশ্ন নির্দ্বিধায় করে ফেলুন নিচে কমেন্টে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url