হযরত আয়েশা (রা) জীবনী - Biography of Hazrat Ayesha (RA).

 হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী - Biography of Hazrat Ayesha (RA).


হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী - Biography of Hazrat Ayesha (RA).

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী ১ম পর্ব

আয়েশা শব্দের অর্থ সৎচরিত্রা । 

ডাক নাম উম্মে আবদুল্লাহ । 

উপাধি সিদ্দিকা ও হুমায়রা ।

 পরবর্তীকালে নবী ( সা:) - এর স্ত্রী হওয়ার কারণে উম্মুল মু'মীনীন বা মু'মীনদের মা খেতাবপ্রাপ্ত হন । পিতার নাম আবূবকর সিদ্দিক । যিনি রাসূল ( সা:) - এর সার্বক্ষণিক সহচর ও বন্ধু ছিলেন । খােলাফায়ে রাশেদার প্রথম খলিফা ছিলেন । তার মায়ের নাম ছিল জয়নব এবং ডাক নাম ছিল উম্মে রুম্মান । পিতার দিক থেকে তাঁর বংশ লতিকা হল - আয়েশা বিনতু আবূবকর ইবনে কুহাফা । ইবনে ওসমান ইবনে আমের ইবনে ওমর ইবেন কা'ব ইবনে সা'দ ইবনে তাইম । মাতার দিক থেকে আয়েশা বিনতু উম্মে রুম্মান বিনতু আমের ইবনে উয়াইমের ইবনে আবদে শামস ইবনে ইতাব ইবনে আযীনা ইবনে শা’বী ইবনে ওয়াহমান ইবনে হারেম ইবনে গানাম ইবনে মালেক ইবনে কেনান । পিতৃকুলের দিক থেকে হযরত আয়েশা ( রা 🙂 তাইম গােত্রের এবং মাতৃকূলের দিক থেকে কেনানা গােত্রের ছিলেন।

হযরত আয়েশা ( রা:) নিঃসন্তান ছিলেন । একদিন তিনি রাসূল ( সা:) - কে বলেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) ! আপনার অন্যান্য স্ত্রীগণ তাদের পূর্বোক্ত স্বামীর সন্তানদের নামানুসারে গুণবাচক নাম গ্রহণ করে থাকেন । আমি কি ডাকনাম গ্রহণ করার ব্যাপারে কারাে নামের সাথে । নিজের নামকে সংযুক্ত করবাে ? 

রাসূলুল্লাহ ( সা:) মৃদু হাসলেন এবং বললেন , “ আয়েশা ! তুমি তােমার বােনের ছেলে আবদুল্লাহর নামের সংগে সংযুক্ত করে ডাকনাম ( কুনিয়াত ) গ্রহণ করতে পারাে । 

এরপর থেকে তিনি উম্মে আবদুল্লাহ নামেই পরিচিতি লাভ করেন । অবশ্য তার পিতা আবুবকর ( রা:) - এর আসল নাম ছিল আবদুল্লাহ , আর ডাক নাম ছিল আবূবকর । এ জন্য আয়েশা ( রা: ) - কে উম্মে আবদুল্লাহ বলার কারণ ইবনুল আসীর এভাবে বর্ণনা করেছেন , তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে রাসূল ( সা:) তাঁকে ‘ সত্যবাদীর কন্যা সত্যবাদিনী ' বলে । ডাকতেন । হযরত আয়েশা ( রা:) - এর জন্ম ও বিয়ের সন - তারিখ নিয়ে বেশ মতপার্থক্য আছে । তবুও সব মতগুলাে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে , নবুয়াতের ১ ম সনে তার জন্ম হয়েছিল এবং নবুয়াতের ১০ ম সনের শাওয়াল মাসে বিয়ে হয়েছিল । এ সময় তার বয়স । হয়েছিল ৯ বছর । যদিও ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে আছে যে , তাঁর বিয়ে । ৬/৭ বছর বয়েসে হয়েছিল । হিজরী দ্বিতীয় সনের শাওয়াল মাসে রাসূল (সা:)

ও হযরত আয়েশা ( রাঃ) - এর রসুমত ( বিবাহ বাসর ) অনুষ্ঠিত হয় । এ সময়ে আয়েশার বয়স হয়েছিল ১৩ বছর , আর নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমার বয়স হয়েছিল ১৮ বছর । আয়েশা ( রা:) ফাতিমা ( রা:) থেকে ৫ বছরের ছােট ছিলেন । রাসূল ( সা:) - এর খালা খাওলা বিনতু হাকিম ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও আরবের জাহেলী যুগের কুসংস্কার দূর করার জন্য আয়েশা ( রা:) - কে বিয়ে করার ব্যাপারে তাঁকে বললেন , সংগে সংগে রাসূল ( সা:) - এর ব্যাপারে হ্যা - না কিছুই বললেন না । তিনি আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা করতে লাগলেন । এরপর তিনি এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন , ‘ এক ফেরেশতা কারুকার্য খচিত একটি রুমালে জড়িয়ে অতি মনােরম এক বস্তু তাঁকে ইনাম দিচ্ছেন ।

 রাসূল ( সা:) তা হাতে নিয়ে ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলেন , ' এটি কি জিনিস ? উত্তরে ফেরেশতা তা খুলে দেখার জন্য আরজ করলেন । রাসূল ( সা:) খুলে দেখলেন তার মধ্যে হযরত আয়েশার সুরত রয়েছে । বুখারী শরীফে এ স্বপ্নের ব্যাপারে আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত আছে । যে , নবী ( সা:) তাঁকে বলেন , দু'বার তােমাকে আমায় স্বপ্নে দেখান হয়েছে । আমি দেখলাম তুমি একটি রেশমী বস্ত্রের মধ্যে এবং ফেরেশতা আমাকে বলেছে ইনি আপনার স্ত্রী , তার ঘােমটা সরান । আমি দেখলাম তুমি । তখন আমি মনে মনে বলেছিলাম , যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তবে তিনি তা কার্যকরী করবেন।

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী ২য় পর্ব

এরপর রাসূল ( সাঃ) - এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খাওলা হযরত আয়েশা ( রা:) - এর পিতা - মাতার কাছে প্রস্তাব পেশ করেন । প্রস্তাব শুনে  আবূবকর জানান যে , এ বিয়েতে তার কোন আপত্তি নেই । কিন্তু তিনি বিস্মিত হয়ে বলেন , এই বিয়ে কিভাবে বৈধ হবে ? আয়েশা তাে আল্লাহর  রাসূলের ভাইঝি । ' এ কথা শুনে রাসূল ( সা:) বলেন , ' তিনি তাে । কেবলমাত্র আমার দ্বীনি ভাই । খাওলা আবূবকর ( রা:) - কে বােঝান যে , রাসূল ( সা:) তাে আপনার রক্ত সম্পর্কের ভাই নন । রক্ত সম্পর্ক না থাকলে একই খান্দানে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের মেয়েকে পর্যন্ত  বিয়ে করতে পারে । আয়েশা ( রা:) - এর মা এ ব্যাপারে বলেন , ' আয়েশার সাথে রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর বিয়ে খুবই আনন্দের কথা । আমার বিশ্বাস এ বিয়ের ফলে । আরবের অনেক জঘন্য কুপ্রথা দূর হবে । স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে 
হযরত আবূবকর ( রা:) তার পিতা আবূ কোহাফাকে বিষয়টি বললেন । তিনি তাঁর মতামতে বললেন , রাসূলুল্লাহর সাথে আমার নাতনীর বিয়ে হলে তা বড়ই গৌরবের কথা হবে। আমার আদরের নাতনী মাহবুব রাব্দুল মাশরিকাইন ও মাগরিবাইন - এর মাহবুবা হবে। তবে আমি আমার নাতনীর বিয়ে যুবায়ের ইবনে মাতয়াম - এর ছেলের সাথে দেবার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ আছি । এই কথা আমি কাউকে এতদিন প্রকাশ করিনি । আমি যুবায়েরের মতামত নিয়ে তােমাকে আমার অভিমত জানাবাে । যুবায়ের ও তার পরিবার তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি । যে কারণে । তারা নওমুসলিম আবুবকরের কন্যার সাথে তাদের সন্তানের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে রাসূল ( সা:) - এর সাথে আয়েশা ( রা:) - এর বিয়ের বাধা দূরীভূত হয় । উভয়পক্ষ বিয়েতে সম্মত হয়ে ৫০০ দিরহাম মােহরানা ধার্য করা হয় । এরপর আবুবকর ( রা:) - এর নিজে রসাল ( সা:) - এর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে নিজ বাড়িতে আনলেন । রাসূল ( সা:) আবূবকরের বাড়িতে আসার । সাথে সাথে উপস্থিত মেহমানবৃন্দ ‘ মারহাবান মারহাবান , আহলান । ওয়াসাহলান বলে তাকে খােশ আমদের জানালেন । বিয়ের মসলিসে
সবাইকে উদ্দেশ্য করে হযরত আবুবকর সিদ্দিক ( রা:) একটি বক্তৃতা দিলেন , ' আপনারা জানেন রাসূলুল্লাহ ( সা:) আমাদের পয়গম্বর । তিনি আমাদেরকে আঁধার থেকে আলােকে নিয়ে এসেছেন । এই আলােকের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবার এবং চিরদিনের জন্য আমাদের এই অকৃত্রিম বন্ধুত্ব বজায় রাখবার পথ অনেকদিন ধরে খুঁজছি । তাই আজ আপনাদের খেদমতে আমার ছােট মেয়েটিকে এনেছি । এই ছােট ছােট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কতশত কুসংস্কার আমরা গড়ে তুলেছি । বিনা অজুহাতে আমরা শিশু কন্যাকে মাটিতে পুঁতে ফেলি , হাত পা বেঁধে দেব - দেবীর পায়ে বলি দেই  যাদেরকে বাঁচিয়ে রাখি তাদেরকে জীবন্ত - মরা করে ফেলি , দোস্তের মেয়েকে আমাদের কেউই বিয়ে করতে পারে না । আপনারা যদি আমার এই আয়েশাকে রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর হাতে সােপর্দ করে দেন তবে চিরতরে আরব দেশ হতে এ সকল কুসংস্কার মুছে ফেলতে পারবেন । এতে আপনারা আমার বন্ধুত্বকে বজায় রাখতে পারবেন এবং আমার কন্যা রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর সাথে থেকে ভবিষ্যতে তাঁর আদর্শ ও বাণী জগতে প্রচার করতে পারবেন । উপস্থিত সুধীবৃন্দ এ বক্তৃতা শােনার পর সমবেত কণ্ঠে আবার বলে উঠলেন , ‘ মারহাবান , মারহাবান , আয়েশার বিয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের সেই কল্যাণ নেমে আসুক ।
এরপর হযরত আবুবকর ( রা:) নিজে খুতবা পাঠ করে রাসূল ( সা:) ও আয়েশা ( রা:) - এর বিয়ে পড়িয়ে দেন । হযরত আশেয়া ( রা:) - এর জন্ম , বিয়ে ইত্যাদি সম্বন্ধে নানা মত থাকলেও একটি বিষয়ে সমস্ত ঐতিহাসিকই একমত , তা হল - তিনি শাওয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন , শাওয়াল মাসেই তার বিয়ে হয় এবং শাওয়াল মাসেই তিনি স্বামীগৃহে প্রথম পদার্পণ করেন । বাল্যকাল থেকেই আয়েশা ( রা:) নানা ক্ষেত্রে প্রত্যুতপন্নমতিত্বের ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন । তিনি ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাধর একজন । বালিকা । তাঁর স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ । যে কোন বিষয় তিনি । দু'একবার পড়লেই মুখস্থ করে ফেলতে পারতেন । হযরত আয়েশা ( রা:) তার পিতার সাথে থেকে ৩/৪ হাজার কবিতা ও কাসিদা কণ্ঠস্থ । করেছিলেন । তিনি ছােটবেলা থেকেই পিতা হযরত আবূবকর ( রা:) - এর । একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষের পূত - পবিত্র সংসর্গে থেকে আদব - কায়দা , আচার - ব্যবহার , চাল - চলন , দান - খয়রাত , পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা , অতিথি আপ্যায়ন এবং সত্যবাদিতার ক্ষেত্রে তাকেই আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন । তিনি তাঁর পিতা - মাতার কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছিলেন , রাসূল ( সা:) - এর সহচর্যে এসে তা শতধারায় বিকশিত হয়েছিল । ফলশ্রুতিতে পরবর্তী জীবনে তিনি মুসলিম বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন । ইসলাম প্রচারের শুরু থেকেই মক্কা ও মদীনাতে মুনাফিকরা তৎপর ছিল । ইসলামের প্রচার প্রসার দেখে তাদের অন্তজ্বালা ক্রমেই বাড়ছিল । তারা সুযােগ খুঁজছিল বড় ধরনের কোন গােলযােগ সৃষ্টির জন্য । বিশেষ করে রাসূল ( সা:) ও আবুবকর ( রা:) - এর মধ্যে যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল । এটাকে তারা ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র করতে লাগলাে । তাদের ধারণা ছিল  আবুবকর যেহেতু সমাজের প্রভাবশালী মানুষ , তাছাড়া রাসূল ( সা:) - এর সব কিছুকে বিনা বাক্য ব্যয়ে বিশ্বাস করে , ফলে তার রেসালাতের দাবি আরাে মযবুত হবে । অতএব তাদের বন্ধুত্বে ভাঙন ধরানাে একান্ত জরুরী । এই উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য মুনাফিকদের সরদার আবদুল্লাহ ।

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী ৩য় পর্ব

ইবনে উবাই পুণ্যবতী , সতীসাধ্বী হযরত আয়েশা ( রা:) - এর চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের জন্য ভয়ানক এক অপবাদ রটনা করে । ৬ ষ্ঠ হিজরীতে অনুষ্ঠিত বনীল মুস্তালিক যুদ্ধের সময় এ ঘটনার সূত্রপাত । মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই পরিকল্পিতভাবে তার প্রচুরসংখ্যক সাঙ্গপাঙ্গসহ এ যুদ্ধে রাসূল ( সা:) - এর সঙ্গী হয় । ইতােপূর্বে অন্য কোন অভিযানে এত বিপুলসংখ্যক মুনাফিক একত্রিত হয়নি । হযরত আয়েশা ( রা:) নিজেই এ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন , রাসূলে করীম ( সা:) এর নিয়ম ছিল যখন কোন দূরদেশে সফরে বের হতেন তখন কোরযার ( লটারী ) সাহায্যে ফয়সালা করতেন তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে কে তার সফর সঙ্গী হবেন । বনীল মুস্তালিক যুদ্ধের সময় এই ‘ কোরয়া ’ ব্যবহারে আমার নাম বের হয় । ফলে আমি তার সঙ্গে গমন করি । ফিরে আসার সময় যখন আমরা মদীনার নিকট পৌছেছি রাত্রিকালে নবী করীম ( সা:) এক মনযিলে তাঁবু গেড়ে অবস্থান করলেন । রাতের শেষভাগে সেখান থেকে যাত্রা প্রস্তুতি শুরু করা হলাে । 
 আমি ঘুম থেকে উঠে ইস্তিঞ্জার জন্য হাওদা থেকে নেমে বাইরে গেলাম । ফিরে আসার সময় অবস্থানের যায়গার নিকটে আসতেই মনে হলাে আমার গলার হার ছিড়ে কোথাও পড়ে গেছে । আমি তা খুঁজতে লাগলাম । ইতােমধ্যে কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেছে । নিয়ম ছিল এই রকম
যে , রওয়ানা হওয়ার সময় আমি আমার নিজের হাওদাজে ' ( পালকি ) বসে যেতাম । আর চারজন লােক তা তুলে উটের পিঠের উপর বেঁধে দিত । এই সময় খাদ্যের অভাবহেতু আমরা মেয়েরা ছিলাম বড়ই হালকা , ভারহীন । আমার হাওদাজ তােলার সময় লােকেরা অনুভবই করতে পারলাে না যে আমি হাওদাজের মধ্যে নেই । তারা আমার অজ্ঞাতসারে হাওদাজ উটের পিঠের উপর তুলে রওয়ানা হয়ে গেল । পরে আমি হার নিয়ে যখন ফিরে এলাম তখন সেখানে কাউকে দেখতে পেলাম না । ফলে আমি আমার গায়ের চাদর দিয়ে সমস্ত শরীর আবৃত করে সেখানেই বসে পড়লাম । আর চিন্তা করতে লাগলাম সামনের দিকে গিয়ে লােকেরা যখন আমাকে দেখতে পাবে না তখন তারা আমাকে তালাশ করতে নিজেরাই ফিরে আসবে । এই অবস্থায় আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালবেলা সাহাবী সাফওয়ান ইবনে মুয়াততিল কাফেলার পরিত্যক্ত জিনিস সগ্রহ করার জন্য ঘটনাস্থলে এসে আমাকে দেখে । চিনতে পারলেন । কেননা পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার আগে তিনি আমাকে কয়েকবার দেখেছিলেন । আমাকে দেখে তিনি উট থেকে নামলেন এবং বিস্ময়ের সংগে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলাে , ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন । রাসূল করীম ( সা:) - এর বেগম এখানে রয়ে গেছেন ! এই শব্দ কানে । যেতেই আমার ঘুম ভেঙে যায় । আমি তাড়াতাড়ি উঠলাম এবং মুখ ঢেকে ফেললাম । তিনি আমার সাথে কোনই কথা বললেন না । তিনি তার উট এনে আমার সামনে বসিয়ে দিলেন আর নিজে দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন । আমি উটের উপর উঠে বসলাম , আর তিনি লাগাম ধরে হেটে রওয়ানা হলেন । প্রায় দুপুরের সময় আমরা কাফেলাকে ধরে ফেললাম .....। এই ঘটনার ওপর মিথ্যা অপবাদের এক পাহাড় রচনা করা হল । যারা এই ব্যাপারে অগ্রণী ছিল তার মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন উবাই ছিল অন্যতম । কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কি কি কথা বলা হচ্ছে তা আমি কিছুই জানতে পারিনি ...... ' ( তাফহীমুল কুরআন , 
৯ ম খণ্ড ) ।
 মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই জোরে সােরে মদীনাবাসীদের কাছে বলতে লাগলেন , ' আল্লাহর কসম , এই মেয়েলােকটি নিজেকে
বাঁচিয়ে আসতে পারেনি । দেখ , দেখ তােমাদের নবীর স্ত্রী অপরের সাথে রাত্রি যাপন করে এসেছে । ইত্যাদি কথা মুনাফিকেরা ব্যাপকভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে দিল । পরিস্থিতি এমন হলাে যে , রাসূল ( সা:) ও হযরত আবুবকর ( রা:) লজ্জায় , ঘৃণায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন । আর হযরত আয়েশা ( রা:) এমনি মর্মাহত হলেন যে সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন । এই অবস্থায় । আয়েশা ( রা : ) - কে কিছুদিনের জন্য বাপেরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হল । হযরত আয়েশা ( রা:) যখন তাঁর পিতার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন । তখন একদিন রাসূল ( সা:) সেখানে গিয়ে তাকে বললেন , ' আয়েশা ! যা শুনছি তা যদি সত্য হয় , তুমি যদি দোষী হও , তুমি অনুতপ্তা হয়ে তওবা কর , আল্লাহ কবুল করবেন । আর যদি মিথ্যা হয় তােমার নির্দোষিতা ও পবিত্রতা সম্বন্ধে শীঘ্রই ওহী নাজিল হবে । হযরত আয়েশা ( রা:) মা বাবাকে ইংগিতে উত্তর দেয়ার জন্য বললেন । কিন্তু তারা কোন কথা বলতে পারলেন না । তাদেরকে নির্বাক দেখে আয়েশা ( রা:) এইভাবে উত্তর দিলেন , ' যদি আমি একবার করি , আমি পবিত্র ও নির্দোষ- আল্লাহ নিশ্চয়ই তা অবগত আছেন - তাহলে এই মিথ্যা অপবাদের সত্যতায় কে সন্দেহ করবে ? 
আর যদি আমি অস্বীকার করি তবে মানুষ কেনই বা বিশ্বাস করবে ? আমার অবস্থা এখন হযরত ইউসুফের বাবার মত যিনি বলেছেন ধৈর্যাবলম্বন কর । ' আয়েশা ( রা:) - এর পবিত্র চরিত্রের নিষ্কলুষতা সম্বন্ধে রাসূল ( সা:) - এর মনে কোন সন্দেহ ছিল না কিন্তু তবু সাবধানতার জন্য প্রকৃত ঘটনা তদন্তের মানসে হযরত আলী ও ওসমানের সমন্বয়ে তিনি দুই সদস্যের একটি টিম গঠন করলেন । তদন্ত কমিটি অনেক অনুসন্ধান করেও হযরত আয়েশা ( রা:) - এর কোন ত্রুটি পেলেন না । শেষ মেশ তারা রির্পোট পেশ করলেন যে , এটা হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কারসাজি । যে কথা রাসূল ( সা:) মসজিদে নববীতে সকল সাহাবীর উপস্থিতিতে বিস্তারিত পেশ করেছিলেন । এমন কি তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইসহ অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে সবাইকে বিবেচনা করতে বলেন । এরপর আল্লাহ রাব্বল আলামীন আয়েশা ( রা:) - এর পবিত্রতা ও উত্তম চরিত্রের পক্ষে সূরা নূরের ১১ থেকে ২৬ নং আয়াত পর্যন্ত নাযিল
করেন । ইরশাদ হচ্ছে , যারা মিথ্যা অপবাদ রচনা করেছে , তারা তােমাদেরই একটি দল । এ অপবাদকে তােমরা নিজেদের জন্য অমঙ্গল। মনে করাে না । বরং তা তােমাদের জন্য কল্যাণকর । তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে কৃত পাপ কর্মের ফল । আর তাদের মাঝে যে এই কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে , তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি । ' এ কথা শুনার পর বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেন নি , এবং বলেননি যে এটা নির্জলা মিথ্যা অপবাদ । তারা কেন সাক্ষী উপস্থিত করেননি , এজন্য তারা আল্লাহর বিধান মত মিথ্যাবাদী । ইহলােক ও পরলােকে তােমারদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ দয়া না । থাকলে তােমরা যাতে নিমগ্ন ছিলে তজ্জন্য কঠিন শাস্তি তােমাদেরকে । স্পর্শ করত । যখন তােমরা মুখে মুখে তা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয়ে । মুখ খুলছিলে যে সম্পর্কে তােমাদের কোন জ্ঞান ছিল না , আর তােমরা তুচ্ছ । করেছিলে , আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ছিল গুরুতর বিষয় । আর তােমরা তা শুনলে তখন কেন বললে । , 
এ বিষয়ে তােমাদের বলাবলি করা উচিত নয় । আল্লাহ পবিত্র , মহান , এ জঘন্য অপবাদ । আল্লাহ পাক তােমাদের উপদেশ দিচ্ছেন , তােমরা যদি বিশ্বাসী হও তবে কখনাে এমন আচরণের পুনরাবৃত্তি করাে না । আল্লাহ পাক তােমাদের জন্য স্বীয় আয়াতগুলাে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়। যারা বিশ্বাসীদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে , তাদের জন্য রয়েছে ।

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী ৪র্থ পর্ব

ইহলােক ও পরলােকে কঠোর শাস্তি । আল্লাহ পাক সুবিজ্ঞ এবং তােমরা ওহী নাযিলের পর মুমীনদের মনে শান্তি ফিরে এল । রাসূল ( সা:) এর নির্দেশে অপবাদকারী তিনজন মুনাফিককে প্রত্যেককে আশিটি করে দোররা মারা হল । কিন্তু মূল আসামী আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে শাস্তি না । দিয়ে রাসূল ( সা:) তার বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন । এ ঘটনাটি ‘ ইফকের ' বা অপবাদ আরােপের ঘটনা হিসেবে ইতিহাস প্রসিদ্ধ হয়ে আছে । ইফকের ঘটনার মাত্র তিন মাস পর ‘ জাতুল জ্বায়েশ ' যুদ্ধে রাসূল ( সা:) গমন করেন । এবারও হযরত আয়েশা রাসূল ( সা:) - এর সফর সঙ্গী হন এবং তার হারটি হারিয়ে যায় । বিষয়টি তিনি তৎক্ষণাৎ রাসূল ( সা:) কে জানান । ফলে রাসূল ( সা:) যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেন । হার খুঁজতে খুজতে ফজরের ওয়াক্ত প্রায় যায় যায় অবস্থা । এদিকে কাফেলার সাথে এক ফোটাও পানি ছিল না । কিভাবে নামায আদায় করা হবে এ ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন । হযরত আবুবকর যথারীতি এ কাফেলার সাথে ছিলেন । তিনি বুঝলেন আয়েশার জন্য এ জিল্লতি । তাই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রাসূল ( সা:) - এর তাবুতে গেলেন এবং রাগত কণ্ঠে বললেন , ‘ আয়েশা ’ ! এই কি তাের আচরণ ? তাের হারের জন্য সমগ্র কাফেলার লােকজন এক চরম বিপদের । সম্মুখীন । অযু - গােসলের জন্য এক বিন্দু পানিও নেই । এখন লােকজন কেমন করে ফজরের নামায আদায় করবে ? বারে বারে তুই আমাদেরকে এ কি ফ্যাসাদে ফেলে চলেছিস ? ' আয়েশা ( রা:) টু শব্দটি করলেন না । কারণ রাসূল ( সা:) তখন তার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজেছিলেন । তিনি মনে মনে শুধু আল্লাহর সাহায্য চাইলেন । এ সময় রাসূল ( সা:) - এর নিকট ওহী নাজিল হল আর যদি তােমরা পীড়িত হও কিংবা বিদেশ ভ্রমণে থাক , কিংবা তােমাদের কেউ শৌচাগার থেকে ফিরে আসে , কিংবা স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এমতাবস্থায় পানি পাওয়া না গেলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর । হস্তদ্বয় ও মুখমণ্ডল মাসেহ কর , আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী । 1
তায়াম্মুমের হুকুম নাজিল হওয়ায় উপস্থিত সবাই খুব খুশি হয়ে আয়েশা ( রা: ও আবুবকর ( রা:) - এর প্রশংসা করতে লাগলেন । রাসূল ( সা:) খুশি মনে সবাইকে নিয়ে তায়াম্মুম করে জামায়াতের সাথে ফজর নামায়ূ আদায় করলেন । নামায শেষে যাত্রা করার উদ্দেশ্যে আয়েশাকে বহনকারী উট উঠে দাঁড়াতেই দেখা গেল তার হার সেখানে পড়ে আছে । হার পাওয়াতে হযরত আবুবকর ( রা:) নিজ কন্যার কাছে এসে বললেন , ‘ মা আয়েশা ! আমি জানতাম না তুই এতই পুণ্যবতী । তােকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা'আলা উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি যে রহমতের ধারা বর্ষণ । করেছেন , তার জন্য হাজারাে শােকর । আল্লাহ পাক তােকে দীর্ঘায়ু দান রাসূল ( সা:) মধু খুব পছন্দ করতেন । এ জন্য জয়নাব ( রা:) তাঁকে প্রায়ই মধুর শরবত তৈরি করে দিতেন । কিন্তু বিষয়টি আয়েশা ( রা:) সহ অন্যান্য নবী পত্নীদের পছন্দনীয় ছিল না । রাসূল ( সা:) যখন ব্যাপারটি আঁচ করলেন , তখন তিনি আর মধু খাবেন না বলে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করলেন । মাহান রাব্বল আলামীন কিন্তু তাঁর পেয়ারা হাবীবের এ মুনাজাত পছন্দ করলেন না । সাথে সাথে অহী নাজিল হল , হে প্রিয় নবী ! আল্লাহ পাক যা কিছু আপনার জন্য বৈধ্য করেছেন , স্বীয় স্ত্রীলােকের প্ররােচনায় তাদের মনস্তুষ্টির জন্য সে হালাল বিষয়কে আপনি অবৈধ বা হারাম বলে অভিহিত করতে পারেন না । আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু । আর আল্লাহ পাক আপনার কসম ভঙ্গ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা হবে আইনসঙ্গত । আল্লাহ পাক আপনার বিশ্বস্ত বন্ধু এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সুপরিজ্ঞাত । এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূল ( সা:) আবার মধু পান করা শুরু করলেন । আয়েশাসহ অনান্য নবীপত্মীগণ এ ব্যাপারে রাসূল ( সা:) এর নিকট ক্ষমা চাইলেন । তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিলেন । এই ঘটনা ' তাহরীম ' এর ঘটনা হিসেবে পরিচিত । উম্মেহাতুল মু'মীনীনগণ একবার স্বচ্ছল জীবন - যাপনের প্রয়ােজনীয় উপকরণ সরবরাহ করার জন্য রাসূল , ( সা:) - এর কাছে আবেদন জানালেন । বিষয়টি রাসূল ( সা:) মােটেই 
ভালভাবে নিলেন না । তিনি দীর্ঘ ঊনত্রিশ দিন নিজ গৃহে না গিয়ে মসজিদে নববীর নিকটস্থ একটি ছােট ঘরে কাটিয়ে দিলেন । সুযােগ বুঝে মুনাফিকরা বলে বেড়াতে লাগলাে রাসূল ( সা:) তার স্ত্রীদের ত্যাগ করেছেন । কথাটি এক কান থেকে আর কানে এমনিভাবে সারা মদীনায় ছড়িয়ে পড়লাে । বুঝতেই পারাে গুজব বাতাসের আগে । ছড়ায় । এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটলাে । পরিস্থিতির এত অবনতি হল যে সাহাবারা পেরেশান হয়ে পড়লেন । হযরত আবূবকর ( রা:) আয়েশাকে বললেন , ‘ আয়েশা ! তােমার উচিত , সিদ্ধান্ত পরিহার করে নবী পাকের দরবারে আত্মসমর্পণ করা । তিনি যদি তােমাদেরকে তালাক না দিয়ে থাকেন তাহলে এটাই হবে ক্ষমা লাভের একমাত্র উপায় । আয়েশা ( রা:) দাবি দাওয়া প্রত্যাহার করে নিলেন কিন্তু রাসূল ( সা:) এর কাছে হাজির হতে সাহস করলেন না । হযরত ওমর ( রা:) তার কন্যা হাফসা ( রা:) - কে অনুরূপ বললেন । এমনিভাবে উম্মেহাতুল মু'মীনীগণ তাঁদের দাবি প্রত্যাহার করলেন । কিন্তু রাসূল ( সা:) গৃহে ফিরলেন না । এমতাবস্থায় ওমর ( রা:) সাহস করে রাসূল । ( সা:) - এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন । পরপর তিনবার নাকোচের চতুর্থবারে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়া গেল । ভয়ে ভয়ে ওমর ( রা:) অত্যন্ত । কাতর কণ্ঠে বললেন , ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ ( সা:) ! আপনি । কী উম্মাহাতুল মু'মীনীনদের তালাক দিয়েছেন ? নবীপাক উত্তর দিলেন , না ? ' পুনরায় পর ।
আমর ইবনুল আস ( রা:) নবীজীকে জিজ্ঞেস করেন , ' ইয়া রাসূলুল্লাহ ( সা:) ! দুনিয়ায় আপনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে ? রাসূল ( সা:) বললেন , আয়েশা । তিনি বললেন , আমি জানতে চাচ্ছি পুরুষদের মধ্যে কে । সবচেয়ে প্রিয় । জবাব দিলেন , আয়েশার পিতা ( অর্থাৎ হযরত অনূবকর ) । হযরত আয়েশা ( রা:) ও প্রাণ দিয়ে রাসূল ( সা:) - কে ভালবাসতেন । নবীজীর ইন্তেকালের সময় যে পােশাক পরিহিত ছিলেন পরবর্তীকালে আয়েশা তা যত্ন সহকারে হেফাযত করেন । একদিন তিনি জনৈক সাহাবাকে নবীজীর কম্বল ও তহবন্দ ( লুঙ্গি জাতীয় ) দেখিয়ে বলেন , আল্লাহর কসম , হযরত এ কাপড় পরিধান করে ইনতিকাল করেছেন । জীবনের শুরুতেই আয়েশা ( রা:) বিধবা হন , এরপর তিনি ৪৮ বছর জীবিত ছিলেন । এই ৪৮ বছর তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে রাসূলের রেখে যাওয়া কাজের তদারকি করেন । রাসূল ( সা:) - এর ওফাতের পর হযরত আবূবকর ( রা:) - এর খেলাফতকে স্বীকার করে বয়াতকালে নবী পত্নীগণ হযরত উসমানের মাধ্যমে মীরাস দাবি করার উদ্যোগ নিলে আয়েশা ( রা:) সবাইকে স্মরণ করিয়ে বলেন , রাসূল ( সা:) বলে গেছেন , কেউ আমার ওয়ারিশ হবে । আমার রেখে যাওয়া জিনিস হবে ছদকা । 
 হযরত আয়েশা ( রা:) পােশাক পরিচ্ছদ পরার ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতেন। একবার তার ভাইঝি হাফছা বিনতু আবদুর রহমান ।
জিজ্ঞেস করলেন , ' আমি কী এ সংবাদ উম্মেহাতুল মু'মীনীনদের দিতে পারি ? ' তিনি বললেন , ' হ্যা জানাতে পার । হযরত ওমর ( রা:) বাইরে এসে সকলকে শুভ সংবাদ দিলেন । এরপর ওহী নাযিল হল , “ হে নবী ! আপনি আপনার মহিয়সীগণকে বলে দিন , যদি তােমরা দুনিয়ার সুখ - স্বাচ্ছন্দ্য ও জাকজমক কামনা কর , তবে আস আমি তােমাদেরকে পরিত্যাগ করি । আর যদি আল্লাহ , আল্লাহর রাসূল ও পরকালের প্রত্যাশা কর তবে আল্লাহপাক পুণ্যবান রমণীদের জন্য মহা পুরস্কার নির্ধারিত করে রেখেছেন । উনত্রিশ দিন পর রাসূল ( সা:) সর্বপ্রথম আয়েশার ঘরে প্রবেশ করে । এ আয়াত পাঠ করলেন এবং বললেন , “ আয়েশা এ দু’টির কোনটি তুমি বেছে নিতে চাও । উত্তরে আয়েশা বললেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই আমার একান্ত কাম্য । এক এক করে রাসূল ( সা:) সকল উম্মেহাতুল মু'মীনীনকে এভাবে জিজ্ঞেস করলেন । সবাই সন্তোষজনক উত্তর দিলেন । রাসূল ( সা:) সবার উত্তরে খুশী হলেন । হযরত আয়েশা ( রা:) সেই সৌভাগ্যবান উম্মােহাতুল মু'মীনীন যার কোলে মাথা রেখে রাসূল ( সা:) ইন্তেকাল করেন । তােমরা শুনলে আশ্চর্য হবে যে , মৃতুর কিছুদিন আগে থেকে অসুস্থাবস্থায় নবী করীম ( সা:) আয়েশা ( রা:) - এর ঘরেই ছিলেন , এমন কি তার ঘরেই রাসূল ( সা:) - কে দাফন করা হয় । পরবর্তীকালে হযরত আবূবকর ( রা:) ও হযরত ওমর ( রা:) - কেও রাসূল ( সা:) - এর পাশে অর্থাৎ আয়েশা ( রা:) - এর ঘরে দাফন করা হয় । আসলে রাসূল ( সা:) অন্যান্যদের তুলনায় আয়েশা ( রা:) - কে একটু বেশি ভালবাসতেন । তিনি নিজেই বলেছেন , পরওয়ারদিগার ! যা কিছু আমার আয়ত্তাধীন ( অর্থাৎ স্ত্রীদের মধ্যে সাম্য বজায় রাখা ) , সে ক্ষেত্রে ইনসাফ থেকে যেন আমি বিরত না থাকি , আর যা আমার আয়ত্তের বাইরে ( অর্থাৎ আয়েশার মর্যাদা ও ভালবাসা ) তা ক্ষমা করে দাও ’ ( আবু দাউদ ) ।
পাতলা ওড়না পরে তাঁর সামনে আসলে তিনি ওড়নাটি ছুড়ে ফেলে বলেন , ‘ সূরা নূর - এ আল্লাহ তা'আলা কি বলছেন , তুমি কি পড়নি ? এরপর একটা মােটা কাপড়ের ওড়না তাকে দেন । আয়েশা ( রা:) কোন এক বাড়িতে একবার বেড়াতে যান । সেখানে । বাড়িতে মালিকের দু’জন মেয়েকে চাদর ছাড়াই নামায পড়তে দেখে বলেন , ' আগামীতে বিনা চাদরে কখনাে নামায পড়বে না । হযরত আবুবকর ( রা:) - এর আমল থেকে আয়েশা ( রা:) বিভিন্ন জটিল বিষয়ে সাহাবাদেরকে পরামর্শ দিতেন । এ সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর হাদীস বর্ণনা করতে থাকেন এবং ফতােয়া দেয়া শুরু করেন । হযরত ওমর ( রা:) - এর শাসনামলে যখন তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদকে সেনাপতির পদ থেকে পদচ্যুত করেন , তখন এ সংবাদ পাওয়ার পর আয়েশা ( রা:) খালিফাকে পরামর্শ দেন খালিদকে সাধারণ সৈনিক হিসেবে রাখার । তা না হলে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশংকা করছিলেন । ওমর ( রা:) মা আয়েশার কথা অনুযায়ী কাজ মিসর অভিযানে আমর ইবনুল আস যখন সুবিধা করতে পারছিলেন , তখন আয়েশা ( রা 🙂 ওমর ( রা:) - কে তাড়াতাড়ি জোবায়েরের নেতৃত্বে নতুন সৈন্য বাহিনী মিসরে পাঠানাের পরামর্শ দেন । খলিফা সেই অনুযায়ী কাজ করলেন । ফলে অল্পদিনেই মিসর মুসলমানদের পদানত হয় । ইরাক বিজয়ের পর গণীমতের মালের মধ্যে এক কৌটা মণি - মুক্তা । পাওয়া যায় । রাসূল ( সা:) - এর প্রিয় স্ত্রী হিসেবে আয়েশা ( রা:) বলেন , হযরতের পর খাত্তাবের পুত্র ওমর আমার প্রতি বিরাট অনুগ্রহ করেছেন । হে আল্লাহ , তাঁর দানের জন্য আগামীতে আমাকে বাঁচিয়া রেখাে না । ওমর ( রা:) - এর খিলাফতকালে উম্মেহাতুল মু'মীনীনদের সকলকে বার্ষিক দশ হাজার দিরহাম বৃত্তি মঞ্জুর করা হয় । কিন্তু হযরত আয়েশা ( রা:) - এর জন্য বার হাজার ধার্য করা হয় । 

হযরত আয়েশা (রা)  জীবনী ৫ম পর্ব

এর কারণ উল্লেখ করে ওমর ( রাঃ) বলেন , ' হযরত আয়েশা ( রা:) । ছিলেন নবীজীর অতি প্রিয় । মৃত্যুর আগে ওমর ( রা:) - এর পুত্র আবদুল্লাহকে আয়েশা ( রা:) - এর । নিকট পাঠান তাঁর লাশ রাসূল ( সা:) - এর পাশে দাফন করার অনুমতির জন্য । এ আবেদন পেশ করলে আয়েশা ( রাঃ) বলেন , স্থানটি আমার নিজের জন্য রাখলেও ওমরের জন্য তা আনন্দের সাথে ত্যাগ করছি । ' আয়েশা ( রা:) - এর অনুমতি পাওয়ার পরও ওমর ( রা:) ওছিয়ত করে যান , “ আমার মৃতদেহ আস্তানার সামনে রাখবে । অনুমতি পাওয়া গেলে ভেতরে দাফন করবে , অন্যথায় সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করবে । ' সেই অনুযায়ী কাজ করা হয় । আয়শা ( রা:) - এর অনুমতি পাওয়ার পর হুজরার ভেতর ওমর ( রা:) - এর লাশ দাফন করা হয় । হযরত ওসমান ( রা:) - এর খিলাফতকালে বিভিন্ন বিষয়ে আয়েশা ( রা:) - এর নিকট থেকে যুক্তি পরামর্শ গ্রহণ করা হত এবং সে মুতাবেক কাজ করা হত । তার সময়ের প্রথমদিকে রাজ্যে হট্টগােল দেখা দিলে । মুহাম্মদ বিন আবুবকরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ খলিফার পদত্যাগের দাবি নিয়ে আয়েশার কাছে আসেন । আয়েশা ( রাঃ) বলেন , ' না , তা হতে পারে । । রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) বলেছেন , যদি ওসমানের হাতে খেলাফতের দায়িত্ব আসে তাহলে সে যেন তা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ না করে । ওসমান ( রা:) - এর খেলাফতের শেষ দিকে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধে দুঃশাসনের অভিযােগ উঠলে আয়েশা ( রা:) - এর পরামর্শ অনুযায়ী 
তাদেরকে রাজধানীতে তলব করা হয় এবং গভর্নরদের পেশকৃত দলিল দস্তাবেজ পরীক্ষা - নিরীক্ষা করা হয় একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে । এ তদন্ত কমিটিও আয়েশা ( রা:) - এর পরামর্শে গঠিত হয় । তােমাদেরকে আগেই বলেছি ইসলাম প্রচারের শুরু থেকেই মুনাফিকরা আল্লাহ , রাসূল ( সা:) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছিল । হযরত ওসমান ( রা:) - এর সময়ে এসে তারা খুবই সুকৌশলে । কাজ শুরু করে এবং হযরত ওসমান ( রা:) - এর শাহাতাদের ফলে তা আরাে বিস্তৃতি লাভ করে । হযরত আলী ( রা:) এমনি এক দুঃখজনক । পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের খলীফা হন । খেলাফত প্রাপ্তির পর পরই তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় হযরত ওসমান হত্যার বিচার করার জন্য । কিন্তু ঘটনা এমন ছিল যে , হত্যাকারী কে বা কারা তা সঠিক করে কেউ জানতাে না । ওসমান ( রা:) - এর স্ত্রী নাইলা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কাউকে চিনতে পারেন নি । ফলে কাউকে সাজা দেয়া যাচ্ছিল । । চক্রান্তকারীরা এ সুযােগটিই গ্রহণ করলাে । তাদের প্ররােচনায় কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবাও ওসমান হত্যার বিচার দাবি করলেন । এদের মধ্যে হযরত আয়েশা , হযরত তালহা ও হযরত যুবাইর ( রা:) - এর মত লােকও ছিলেন । তারা হযরত আয়েশার নেতৃত্বে মক্কা থেকে বসরার দিকে যাত্রা করেন , সেখানে ওসমান হত্যার বিচার দাবিকারীদের সংখ্যা ছিল বেশি । এহেন সংবাদে হযরত আলী ( রা:) সেনাদলসহ সেখানে পৌছান এবং দু’বাহিনী মুখােমুখি অবস্থান নেয় । যেহেতু উভয়পক্ষ সততার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল , ফলে আলাপ আলােচনার পর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় । কিন্তু চক্রান্তকারীরা এ ধরনের পরিস্থিতির পক্ষে ছিল না । তাই তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাতের আঁধারে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর আক্রমণ চালায় , আর প্রচার করতে থাকে যে অপর পক্ষ সন্ধির সুযােগ নিয়ে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছে । এতে যুদ্ধ আরাে ভয়াবহ রূপ । নেয় । উভয়পক্ষে প্রচুর শহীদ হন । শেষ পর্যন্ত হযরত আলী জয়লাভ করেন এবং আয়েশা ( রা:) - কে সসম্মানে মদীনা পাঠিয়ে দেন । এই যুদ্ধে হযরত আয়েশা ( রা:) উটে আরােহণ করে যুদ্ধ পরিচালনা । করেছিলেন বলে ইতিহাসে এটা জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত ।
আমীর মুয়াবিয়ার শাসনামলে আয়েশা ( রা:) - এর খেদমতে তিনি এক লক্ষ দিরহাম উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন । আয়েশা ( রা:) ঐদিন সন্ধ্যার আগেই পুরাে এক লক্ষ দিরহাম গরীব মিসকিনদের মধ্যে দান করে দিলেন । ঐদিন তিনি রােযা ছিলেন । কিন্তু তিনি ইফতার করার জন্যেও কিছু রাখেন নি । তাই তার দাসী আরজ করলাে , ‘ ইফতারের জন্য তাে কিছু রাখা প্রয়ােজন ছিল । '
 উত্তরে আয়েশা ( রাঃ ) বললেন , ‘ মা ! তােমার এ বিষয়ে আগে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল । হযরত আয়েশা ( রা:) অনেক ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে বিশিষ্ট ছিলেন । উম্মােহাতুল মু'মীনীনদের মধ্যে তাঁর ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য ছিল । ব্যক্তিক্রমধর্মী । তিনি নিজেই বলেন , ' এটি আমার অহঙ্কার নয় , বরঞ্চ প্রকৃত ঘটনা এই যে , আল্লাহ রাব্বল আলামীন নয়টি বিষয়ে দুনিয়ার সকলের চেয়ে আমাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন- ( ১ ) আমার বিবাহের আগে আমার সূরত ফেরেশতাগণ রাসূলুল্লাহর সামনে রেখেছিলেন ; ( ২ ) যখন আমার নয় বছর বয়স তখন রাসূল্লাহ ( সা:) আমাকে বিয়ে করেছিলেন ; ( ৩ ) ১৩ বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর বাড়িতে পদার্পণ করেছি ; ( ৪ ) আমি ছাড়া রাসূলুল্লাহ ( সা:)- এর কোন স্ত্রী কুমারী ছিল না ; ( ৫ ) রাসূলুল্লাহ ( সা:) যখন আমার কাছে থাকতেন তখন প্রায়ই তার ওপর ওহী নাযিল হতাে । আমি রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর প্রিয়তম স্ত্রী ছিলাম ; ( ৭ ) আমাকে লক্ষ্য করে সূরা নূরের এবং তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়েছে ; ( ৮ ) আমি চর্মচক্ষে দুবার জিবরাঈল ( আ:) - কে দর্শন । করেছি ; ( ৯ ) রাসূলুল্লাহ ( সা:) আমারই কোলে পবিত্র মাথা রেখে ইন্তেকাল করেছেন । হযরত আয়েশা ( রা:) ছিলেন একজন মহৎ মনের মানুষ । কবি হাসসান বিন সাবিত ইফকের জঘন্য অপবাদকারীদের মধ্যে শামিল । ছিলেন । তবু কবি সাবিত যখন আয়েশা ( রা:) - এর মজলিসে আসতেন । তিনি সাদরে তাকে বরণ করে নিতেন । অন্যরা সাবিতের কৃতকর্মের জন্য সমালােচনা ও নিন্দা করলে তিনি বলতেন , ‘ তাকে মন্দ বলাে না । সে । বিধর্মী ও পৌত্তলিক কবিদের কবিতার উত্তর রাসূলুল্লাহ ( সা:) - এর তরফ থেকে প্রদান করতাে ।
1 হযরত আয়েশা ( রা:) এর ছিল প্রচণ্ড সাহস ও আত্মিক মনােবল । কারণে তিনি ওহুদ যুদ্ধের সময় । আহতদের সেবা । করতে পেরেছিলেন । তিনি সেখানে দৌড়াদৌড়ি করে মর্শক ( কলস জাতীয় চামড়ার তৈরি এক প্রকার পানির পাত্র ) কাঁধে নিয়ে তৃষ্ণার্তদের পানি পান । করিয়েছিলেন । তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধের এক পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । এমনিতেও তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণের প্রবল ইচ্ছা পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন । রাতেরবেলা তিনি একাকিনী কবরস্থানে গমন করতেন । রাসূল ( সা:) জীবিত থাকতে তিনি তাঁর সাথে সাথে রাতেরবেলা তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন । বেশির ভাগ দিন তিনি রােযা রাখতেন । ইশরাকের নামায সম্বন্ধে আয়েশা ( রা:) নিজে বলেছেন , আমি নবীজীকে কখনাে ইশরাকের নামায পড়তে না দেখলেও আমি নিজে তা পড়ি । তিনি অনেক কিছু পছন্দ করতেন , উম্মতের ওপর ফরয হয়ে যাবে এ আশংকায় তদনুযায়ী আমল করতেন না । তােমরা হযরত আয়েশা ( রা:) - এর পাণ্ডিত্যের বিবরণ শুনলে অবাক হয়ে যাবে , তিনি কুরআন , হাদীস , ফিকাহ , উসুল , ইজমা , কিয়াস , সাহিত্য , ইতিহাস , রসায়ন , চিকিৎসা বিদ্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে সুপণ্ডিত ছিলেন । তিনি শিক্ষকতা ও বক্তৃতায় পারদর্শী ছিলেন । এক পরিসংখ্যানে । জানা যায় তার ছাত্র সংখ্যা ছিল কমপক্ষে বার হাজার ।
এ জন্যই আয়েশা ( রা) সম্পর্কে রাসূল ( সাঃ ) বলেছেন , শরীয়তের অর্ধেক বিদ্যাই তােমরা ঐ রক্তাভ গৌরবর্ণা মহিষীর নিকট থেকে শিখতে পারবে । ' হযরত আবূ মূসা আশআরী ( রাঃ) বলেন , ' সাহাবী হিসাবে আমাদের সামনে এমন কোন কঠিন বিষয় উপস্থিত হয়নি , যা হযরত আয়েশাকে জিজ্ঞেস করে তার কাছে কিছু জানতে পারিনি । ' বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান ইবনে । আওফ বলেন , ' হযরত আয়েশার চেয়ে সুন্নাতে নববীর বড় আলেম , দ্বীনের সূক্ষ্মতত্ত্বে বিশেষজ্ঞ , কালামে মজীদের আয়াতের শানে নুযূল এবং ফারায়েয সম্পর্কে বেশি জ্ঞানের অধিকারী আর কাউকে দেখিনি । হযরত আতা ইবনে আবূ রােবাহ তার সম্বন্ধে বলেন , ' হযরত আয়েশা ছিলেন সবচেয়ে বড় ফকীহ , সবচেয়ে উত্তম মানুষ এবং লােকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সুস্থ মতের অধিকারিণী । ' ইমাম যুহরী বলেন , সকল পুরুষ এবং উম্মুল । মু'মীনীনদের সকলের । এলেম একত্র করা হলে হযরত আয়েশার । এলেম হবে তাদের সবার চেয়ে । বেশি । ' হযরত আয়েশা ( রা:) মােট ২২১০ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন । এর মধ্যে ১৭৪ হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ঐক্য মত্যে পৌছেছেন । ইমাম বুখারী ( রা:) তাঁর কাছ থেকে এককভাবে ৫৪ টি হাদীস এবং ইমাম মুসলিম ( রা:) ৬৮ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন । কারাে মতে তিনি শরীয়তের এক - চতুর্থাংশ নির্দেশাবলী বর্ণনা করেছেন । হযরত আয়েশা ( রা:) অন্ধ অনুকরণের ঘাের বিরােধী ছিলেন । তিনি
সবকিছু যাচাই বাছাই করে তারপর গ্রহণ করতেন । রাসূল ( সা:) - এর সময়ে মেয়েরা মসজিদে গিয়ে পুরুষদের পেছনে নামায পড়তে পারতেন কিন্তু রাসূল ( সা:) - এর ইন্তেকালের পর তৎকালীন সময়ের মেয়েদের চলাফেরা দেখে আয়েশা ( রা:) বেশ গােস্বার সাথে বলেছিলেন , রাসূল ( সা:) যদি জানতেন , নারীদের কি দশা হবে , তা হলে তিনি বনী ইসরাঈলের মতাে নারীদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন কা'বা শরীফের চাবিধারী ইবনে ওসমান একবার এসে আয়েশা ( রা:) - কে বললেন , ' কা'বা শরীফের গেলাফ নামানাের পর তা দাফন করা হয়েছে । যেন মানুষের নাপাক হাত তা স্পর্শ করতে না পারে । ' হযরত আয়েশা বললেন , এটাতাে কোন যুক্তিযুক্ত কথা হলাে না । গেলাফ খুলে । ফেলার পর যার ইচ্ছে তা ব্যবহার করতে পারে । তুমি তা বিক্রি করে গরীব - দুঃখীদের মধ্যে তার মূল্য বিতরণ করে দাওনা কেন ? বুঝতেই পারছাে আয়েশা ( রা:) কেমন সংস্কারমুক্ত মানুষ ছিলেন । সাহাবী ও তাবেয়ী মিলে মােট দুই শতাধিক রাবী আয়েশা ( রা:) - এর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন । এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন , মসরুক , আসাওয়াদ , ইবনুল মুসাইয়িব , উরওয়াহ , কাসেম প্রমুখ । সাহাবি । আমীর মুয়াবিয়ার শাসনামলে ৫৮ হিজরীতে ১৭ রমযান ৬৮ বছর বয়সে হযরত আয়েশা ( রা:) ইতিকাল করেন । তাঁর ওছিয়ত মােতাবেক রাতেরবেলা তাকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয় । মদীনার তৎকালীন । গভর্নর আবু হােরায়রা ( রা:) তাঁর নামাযে জানাযা পড়ান । আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের ও ওরওয়াহ বিন জুবায়ের দুই সহােদর জানাযার পর তার লাশ কবরে নামান । হযরত আয়েশা ( রা:) - এর ইতিকালের সংবাদে রাতেরবেলায়ও পুরুষ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে মহিলার সমাগম ঘটে । তার মৃত্যু সংবাদ সবাইকে এত ব্যথাতুর করেছিল যে , মাসরুক বলেন , ‘ নিষিদ্ধ না হলে আমি উম্মুল মু'মীনীনের জন্য মাতমের আয়ােজন করতাম । আর হযরত আবূ আইউব আনসারী বলেন , ' আমরা আজ মাতৃহারা শিশুর মত এতীম  হলাম । 
--------------------সমাপ্ত-------------------



হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী,আয়েশা রাঃ এর জীবনী,হযরত আয়েশা (রা) এর জীবনী,হযরত আয়েশার জীবনী,হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর জীবনী পর্ব-১,মা আয়েশার জীবনী,আয়েশা রাঃ এর জীবনী মিজানুর রহমান,আয়েশা (রা) এর জীবনী,হযরত আয়েশা (রা.),আয়েশা (রা.) এর জীবনী,আয়েশা রাঃ এর জীবনী ওয়াজ,আয়েশা (রা),হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর জীবনী,হযরত আয়েশা (রা),উম্মল মুমেনিন হয়রত আয়েশা (রা),হযরত আয়েশা (রা.) এর জীবনী |পর্ব -১ |,আম্মাজান আয়েশার জীবনী,হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী




সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url