কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি সমস্যা হবে?

 কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি সমস্যা হবে?

কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি সমস্যা হবে  - neotericit.com

কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি সমস্যা হবে - neotericit.com

কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি সমস্যা

উত্তর ঃক্বিবলার দিকে পা রাখা-এ নিয়ে ইদানিংকাল কিছুটা বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ ঢালাওভাবে জায়েয বলছেন।আবার কেউ কেউ সম্পূর্ণরূপে হারাম বলছেন। আসলে বিষয়টা কি?মতবেদের মূল কারণ কি? 

আমাদেরকে স্বরণ রাখতে হবে, 

কোনো বিষয় ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম সাব্যস্ত হবে না যতক্ষণ না হারাম হওয়ার অকাট্য দলিল পাওয়া যাবে।পশ্চিম দিকে পা রাখা হারাম মর্মে কোরআন-হাদীসে অদ্য কোনো অকাট্য দলিল পাওয়া যাচ্ছে না। যে জন্য পশ্চিম দিকে পা রাখাকে ঢালাও ভাবে হারাম বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদেরকে স্বরণ রাখতে হবে যে, কা'বা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে অন্যতম বিশেষ একটি নিদর্শন। আর আল্লাহ তা'আলা র নিদর্শন সমূহকে সর্বোচ্ছ সম্মান প্রদর্শন করা সমস্ত মানুষের উপর ফরয। 

 আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

 ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ [٢٢:٣٢ 

এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তাতো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত। [সূরা হাজ্জ্ব-৩২] 

সম্মান প্রদর্শন একটা আপেক্ষিক বিষয়; আমরা জানি- এক জায়গায় কোনো একটা কাজকে সম্মান বলা হলেও ভিন্ন জায়গায় ঐ কাজকে অসম্মানের মনে করা হয়। তাই যে সমাজে কোনো কিছুর দিকে পা রাখাকে অসম্মানের মনে করা হয় সে সমাজে অবশ্যই কা'বা অবস্থানের দিকের প্রতি পা রাখা জায়েয হবে না। এমনকি অসম্মানের জন্য যদি কেউ কা'বা র দিকে পা রাখে তাহলে সেটা কুফুরী কাজ হবে।

যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে,

 الفتاوى الهندية- ويكره مد الرجلين إلى الكعبة في النوم وغيره عمدا (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الخامس في آداب المسجد والقبلة والمصحف-5/319 

 কাবার দিকে ইচ্ছেকৃত পা লম্বা করা মাকরূহ। ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়। {৫/৩১৯,} আরো বর্ণিত রয়েছে..... আল মুহিতুল বুরহানী-৮/১০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৯/১৭৪} 

অনিচ্ছায় হলে সমস্যা নেই।কিন্তু অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে হলে ঈমান চলে যাবার আশংকা থাকবে। ফুকাহায়ে কেরামদের ভাষ্যমতে স্বাভাবিক অবস্থায় পশ্চিম দিকে পা রাখা মাকরুহ। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে- ইমাম যারকানী মুওয়াত্তা মালিকের ব্যখ্যা গ্রন্থে সহীহ ইবনে খুযাইমা ও সহীহ ইবনে হাব্বানের বরাতে নিম্নোক্ত হাদীসে মারফু উল্লেখ করেন-

 " ﻣﻦ ﺗﻔﻞ ﺗﺠﺎﻩ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺟﺎﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﺗﻔﻠﻪ ﺑﻴﻦ ﻋﻴﻨﻴﻪ " 

 যে ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে,কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উত্তোলন করা হবে যে,তার থুথু তার দু চক্ষুর মাঝখানে থাকবে।

 ﻭﻻﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎ : " ﻳﺒﻌﺚ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻨﺨﺎﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻫﻲ ﻓﻲ ﻭﺟﻬﻪ " 

ইমাম যারকানী রাহ ইবনে হিব্বান এবং আবু দাউদ রাহ এর বরাতে আরেকটি বর্ণনা করেন-

 ﻋﻦﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﺧﻼﺩ : " ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﻡ ﻗﻮﻣﺎ ﻓﺒﺼﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ، ﻓﻠﻤﺎ ﻓﺮﻍ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - : " ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﻟﻜﻢ " ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ : " ﺇﻧﻚ ﺁﺫﻳﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ " ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ [ ﺹ : 663 ] ﺍﻟﺘﻤﻴﻤﻲ ، ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻪ 

এক সাহাবী নামাযের ইমামতি করার সময় সামন তথা ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলেন,যখন তিনি নামায থেকে ফারিগ হলেন তখন তিনি বললেনঃ সে মূলত তোমাদেরকে নিয়ে নামাযই পড়ায়নি।উক্ত হাদীসে আরো বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ উনাকে বলেন- নিশ্চয় তোমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ।

 ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺰﺭﻗﺎﻧﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﻃﺄ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ» ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ » ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻨﻬﻲ ﻋﻦ ﺍﻟﺒﺼﺎﻕ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ 

 শরহে যারকানী-পৃষ্টা-662

পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানোর হাদিস

প্রশ্ন : পশ্চিম বা উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো কি নাজায়েজ? আমার বাবা আমাকে এভাবে পা দিয়ে ঘুমাতে দেন না। তাঁর মতে, এটা নাকি গুনাহের কাজ। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। আশা করি, আপনার কাছে সঠিক উত্তর পাব। উত্তর : পশ্চিম বা উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো নিষেধ—এমনটি হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। এটি হারাম অথবা মাকরুহ অথবা অপছন্দনীয়—এমন কোনো বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর হাদিসের মাধ্যমে অথবা ফিকর ওলামায়ে কেরামদের বক্তব্যের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। সুতরাং যদি কেউ বলেন যে এটি গুনাহের কাজ, তাহলে ভুল কথা বলেছেন। পূর্ব-পশ্চিম সবটাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি এবং আল্লাহর বান্দা যেকোনো দিকেই পা দিয়ে ঘুমাতে পারেন। এটি জায়েজ রয়েছে। আমাদের যেহেতু কেবলামুখী হয়ে সালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে; আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের মধ্যে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের চেহারাগুলোকে মসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও।’ এই যে কেবলামুখী হতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এটি কেবলার সম্মান করার জন্য। কোনোভাবেই ইমানদার ব্যক্তিদের জন্য জায়েজ নেই, কোনো আচরণের মাধ্যমে কেবলার অসম্মান ঘটাবে। যে কাজগুলো কেবলার অসম্মান ঘটায়, সে কাজগুলো করা হারাম, জায়েজ নেই। যেমন : কেবলার দিকে থুতু ফেলা, এটি রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। এর মাধ্যমে অসম্মান হয়ে থাকে। কিন্তু পা দেওয়াটা অসম্মানের বিষয় নয়। কারণ, শুতে হলে কোনো দিকে তো পা দিতে হবে। প্রয়োজনে যেকোনো দিকে পা দেওয়া যাবে। কেবলার অসম্মানের সঙ্গে এটি জড়িত নয়। তাই কেউ যদি মনে করে থাকেন এটি কেবলার অসম্মান, তিনি আসলে এটি ভুল বুঝেছেন। এটি শুদ্ধ নয়, তাঁকে সংশোধন করতে হবে।


সোর্সঃ পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো কি জায়েজ?


tags: পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো যাবে কি,কিবলার দিকে পা দিয়ে শোয়া যাবে কি,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো কি হারাম,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো বা বসা কী বলে ইসলাম,পশ্চিম দিকে পা দিলে কি গুনাহ হয়,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানোর হাদিস,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি গুনাহ হবে?,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শোয়ার বিধান,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কি হয়,পশ্চিম দিকে পা দেয়া কি হারাম,পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো কি জায়েজ?,পশ্চিম দিকে পা

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url